Apj biography in bengali
এ. পি. জে. আবদুল কালাম
এই নিবন্ধটি ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে। একই নামের এক ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীর জন্য আবুল কালাম আজাদ দেখুন।
ভারতরত্ন এ. পি. জে. আবদুল কালাম | |
---|---|
অফিসিয়াল প্রতিকৃতি, ২০০২ | |
কাজের মেয়াদ ২৫ জুলাই, ২০০২– ২৫ জুলাই, ২০০৭ | |
প্রধানমন্ত্রী | অটলবিহারী বাজপেয়ী মনমোহন সিংহ |
উপরাষ্ট্রপতি | কৃষ্ণ কান্ত ভৈরোঁ সিং শেখাওয়াত |
পূর্বসূরী | কে. আর. নারায়ণন |
উত্তরসূরী | প্রতিভা দেবীসিংহ পাটিল |
জন্ম | আভুল পাকির জয়নুলাবেদিন আবদুল কালাম (১৯৩১-১০-১৫)১৫ অক্টোবর ১৯৩১ রামেশ্বরম, রামনাথস্বামী জেলা, মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা ভারতেরতামিলনাড়ু রাজ্যে) |
মৃত্যু | ২৭ জুলাই ২০১৫() (বয়স৮৩) শিলং, মেঘালয়, ভারত |
মৃত্যুর কারণ | হৃদরোগ |
জাতীয়তা | ব্রিটিশ ভারতীয় (১৯৩১-১৯৪৭) ভারতীয় (১৯৪৭-২০১৫) |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | সেন্ট জোসেফস কলেজ, তিরুচিরাপল্লি মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি |
জীবিকা | অধ্যাপক লেখক বিমান প্রযুক্তিবিদ |
ধর্ম | ইসলাম |
স্বাক্ষর | |
ওয়েবসাইট |
আভুল পাকির জয়নুলাবেদিন আবদুল কালাম (বাংলা:[abdulkalam]; তামিল: அவுல் பக்கிர் ஜைனுலாபுதீன் அப்துல் கலாம்; ১৫ অক্টোবর ১৯৩১ - ২৭ জুলাই ২০১৫) একজন ভারতীয় পরমাণু বিজ্ঞানী ছিলেন যিনি ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের একাদশরাষ্ট্রপতি (২০০২ - ২০০৭) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তার জন্ম বর্তমান ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের রামেশ্বরমে। তিনি পদার্থবিদ্যা বিষয়ে সেন্ট জোসেফস কলেজ থেকে এবং বিমান প্রযুক্তিবিদ্যা (এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং) বিষয় নিয়ে মাদ্রাজ ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে পড়াশোনা করেছিলেন। চল্লিশ বছর তিনি প্রধানত রক্ষা অনুসন্ধান ও বিকাশ সংগঠন (ডিআরডিও) ও ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় (ইসরো) বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান প্রশাসক হিসেবে কাজ করেন। ভারতের অসামরিক মহাকাশ কর্মসূচি ও সামরিক সুসংহত নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচির সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন।[১]ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও উৎক্ষেপক যান রকেট উন্নয়নের কাজে তার অবদানের জন্য তাকে ‘ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র মানব’ বা ‘মিসাইল ম্যান অফ ইন্ডিয়া’ বলা হয়।[২]
১৯৯৮ সালে পোখরান-২ পরমাণু বোমা পরীক্ষায় তিনি প্রধান সাঙ্গঠনিক, প্রযুক্তিগত ও রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করেন। এটি ছিলো ১৯৭৪ সালে স্মাইলিং বুদ্ধ নামে পরিচিত প্রথম পরমাণু বোমা পরীক্ষার পর দ্বিতীয় পরমাণু বোমা পরীক্ষা।[৩]
২০০২ সালে কালাম তৎকালীন শাসকদল ভারতীয় জনতা পার্টি ও বিরোধী দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সমর্থনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। পাঁচ বছর এই পদে আসীন থাকার পর তিনি শিক্ষাবিদ, লেখক ও জনসেবকের সাধারণ জীবন বেছে নেন। ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ভারতরত্নসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছিলেন কালাম।তার বিজ্ঞানের কৃতিত্ব ও রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার দায়িত্ব পালন ভারতের কাছে স্মরণীয়।
প্রথম জীবন ও শিক্ষা
[সম্পাদনা]আভুল পাকির জয়নুলাবেদিন আবদুল কালাম ১৯৩১ সালের ১৫ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার, ব্রিটিশ ভারতেরমাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির (অধুনা ভারতেরতামিলনাড়ু রাজ্যের) রামেশ্বরমের এক তামিল মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[৪] তার পিতা আভুল পাকির জয়নুলাবেদিন ছিলেন একজন নৌকামালিক ও স্থানীয় মসজিদের ইমাম এবং মাতা অশিয়াম্মা ছিলেন গৃহবধূ।[৫][৬][৭][৮] তার পিতা রামেশ্বরম ও অধুনাবিলুপ্ত ধনুষ্কোড়ির মধ্যে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের নৌকায় পারাপার করাতেন।[৯][১০] কালামের পরিবার ছিলো অত্যন্ত গরিব। অল্প বয়স থেকেই পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তাকে কাজ করা শুরু করতে হয়।[১১] বিদ্যালয়ের শিক্ষা সমাপ্ত করার পর পিতাকে সাহায্য করার জন্য তাকে সংবাদপত্রে লেখালিখি শুরু করতে হয়।[১১][১২] বিদ্যালয়ে তিনি ছিলেন সাধারণ মানের ছাত্র। কিন্তু তার শিক্ষাগ্রহণের তীব্র বাসনা ছিলো। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তিনি পড়াশোনা করতেন ও অঙ্ক কষতেন।[১২]
রামনাথপুরম স্কোয়ার্টজ ম্যাট্রিকুলেশন স্কুল থেকে শিক্ষা সম্পূর্ণ করার পর কালাম তিরুচিরাপল্লিরসেন্ট জোসেফস কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫৪ সালে সেই কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক হন।[১৩] পাঠক্রমের শেষের দিকে তিনি পদার্থবিদ্যা সম্পর্কে উৎসাহ হারিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে চার বছর ওই বিষয় অধ্যয়ন করেন।
১৯৫৫ সালে তিনি মাদ্রাজে (অধুনা চেন্নাই) চলে আসেন। এখানকার মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে তিনি বিমানপ্রযুক্তি শিক্ষা করেন।[৮] একটি সিনিয়র ক্লাস প্রোজেক্টে কাজ করার সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ডিন তার কাজে অগ্রগতি না দেখে অসন্তুষ্ট হন। তিনি ভয় দেখান তিন দিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে তার বৃত্তি প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। কালাম তিন দিনেই কাজ শেষ করেন। তা দেখে ডিন খুশি হন। পরে তিনি কালামকে লিখেছিলেন, "আমি তোমাকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলাম। তোমাকে এমন সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলেছিলাম যা করা খুব শক্ত।"[১৪] তিনি অল্পের জন্য ফাইটার পাইলট হওয়ার সুযোগ হারান। উক্ত পরীক্ষায় ভারতীয় বিমানবাহিনীর আট জন কর্মীর দরকার ছিলো। তিনি পরীক্ষায় নবম হয়েছিলেন।[১৫]
পেশাজীবন
[সম্পাদনা]তিনি ১৯৬০ সালে স্নাতক সম্পন্ন করার পর ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার এরোনটিক্যাল ডেভলপমেন্ট এস্টব্লিশমেন্টে একজন বিজ্ঞানী হিসেবে যোগদান করেন। উক্ত প্রতিষ্ঠানে তিনি একটি ছোট হোভারক্রাফটের নকশা তৈরি করে তার কর্মজীবন শুরু করেন।[১৬]
কালাম ভারতীয় জাতীয় মহাকাশ গবেষণা কমিটিতে প্রখ্যাত মহাকাশ বিজ্ঞানী ড. বিক্রম সারাভাইয়ের অধীনে কাজ করতেন।[৮] ১৯৬৯ সালে আব্দুল কালাম ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় বদলি হন। সেখানে তিনি ভারতের কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণকারী যানের (এসএলভি-III) প্রকল্প পরিচালক ছিলেন যা ১৯৮০ সালের জুলাইয়ে 'রোহিণী' কৃত্রিম উপগ্রহকে তার কক্ষপথে স্থাপন করে। কালাম ১৯৬৫ সালে প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থায় স্বাধীনভাবে একটি বর্ধমান রকেট প্রকল্পের কাজ শুরু করেন।[১] ১৯৬৯ সালে তিনি সরকারে অনুমোদন লাভ করেন এবং আরও কয়েকজন প্রকৌশলীকে নিয়ে এই প্রোগ্রামের ব্যপ্তি ঘটান।[১৭]
তিনি ১৯৬৩-৬৪ সালে নাসারল্যাংলি রিসার্চ সেন্টার, গডার্ড স্পেশ ফ্লাইট সেন্টার এবং ওয়ালোপ্স ফ্লাইট ফেসিলিটি পরিদর্শন করেন।[১৮] তিনি ১৯৭০ থেকে ১৯৯০ সালের মাঝে পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল(পিএসএলভি) এবং এসএলভি-III গড়ার চেষ্টা করেন। তিনি এই কাজে সফল হয়েছিলেন।
পরবর্তী জীবন
[সম্পাদনা]রাষ্ট্রপতি অফিস ছাড়ার পর, কালাম ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট শিলং[১৯], ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট আহমেদাবাদ[২০] এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট ইন্দোরে[১৯] ভিজিটিং প্রফেসর হন; ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স, ব্যাঙ্গালোরের একজন সাম্মানিক ফেলো; ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ স্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি তিরুবনন্তপুরমের চ্যান্সেলর; আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং এর অধ্যাপক; এবং ভারত জুড়ে অন্যান্য অনেক একাডেমিক এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি হায়দ্রাবাদের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনোলজিতে তথ্য প্রযুক্তি এবং বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রযুক্তি শিক্ষা দিতেন।
২০১১ সালে, কালাম কুডনকুলাম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিষয়ে তার অবস্থানের জন্য নাগরিক গোষ্ঠীগুলির দ্বারা সমালোচিত হন; তিনি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠাকে সমর্থন করেছিলেন এবং স্থানীয় জনগণের সাথে কথা না বলার জন্য অভিযুক্ত হন। প্রতিবাদকারীরা তার সফরের প্রতি বিরূপ ছিল কারণ তারা তাকে একজন প্রো-পারমাণবিক বিজ্ঞানী হিসেবে দেখেছিল এবং প্ল্যান্টের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যের বিষয়ে তিনি যে আশ্বাস দিয়েছিলেন তাতে তারা একমত হননি।
মৃত্যু
[সম্পাদনা]২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে জুলাই, সোমবার, মেঘালয়েরশিলং শহরে অবস্থিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট নামক প্রতিষ্ঠানে বসবাসযোগ্য পৃথিবী বিষয়ে বক্তব্য রাখার সময় ভারতীয় প্রমাণ সময় সন্ধ্যা ৬:৩০ নাগাদ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন। তাকে বেথানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে সন্ধ্যা ভারতীয় প্রমাণ সময় ৭:৪৫ নাগাদ তার মৃত্যু ঘটে।[২১][২২][২২][২৩][২৪]
কালামের মৃতদেহ ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে শিলং থেকে গুয়াহাটি নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে একটি সি-১৩০ হারকিউলিস বিমানে নতুন দিল্লির পালাম বিমান ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। ভারতের রাষ্ট্রপতিপ্রণব মুখোপাধ্যায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রীনরেন্দ্র মোদী, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীঅরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং তিন বাহিনীর প্রধান কালামের মরদেহে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন।[২৫] এরপর জাতীয় পতাকায় ঢেকে কালামের দেহ ১০, রাজাজি মার্গে তার দিল্লির বাসস্থানে নিয়ে যাওয়া হলে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীঅখিলেশ যাদবসহ বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিরা শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।[২৬]
ভারত সরকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কালামের মৃত্যুতে তার সম্মানে সাত দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা করে।[২৭] প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার বক্তব্যে বলেন যে, “কালামের মৃত্যু দেশের বিজ্ঞান জগৎের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি, কারণ তিনি ভারতকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন ও পথ দেখিয়েছিলেন।”[n ১]চতুর্দশ দলাই লামা কালামের মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন ও প্রার্থনা করে বলেন যে, “কালাম শুধুমাত্র একজন বৈজ্ঞানিক, শিক্ষাবিদ বা রাষ্ট্রনেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন নিপাট ভদ্রলোক, সরল ও বিনয়ী।”[n ২] ভুটান সরকার দেশের পতাকা অর্ধনমিত রাখার ও ১০০০টি বাতি প্রজ্জ্বলনের নির্দেশ দেয় এবং ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে কালামকে ‘ভারতীয় জনগণের রাষ্ট্রপতি’ বলে উল্লেখ করে গভীর শোক প্রকাশ করেন।[n ৩] ইন্দোনেশিয়ার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি সুসিলো বমবাং ইয়ুধোয়োনো ও সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লী সিয়েন লুং কালামের প্রতি সম্মান জানান।[৩১]
স্মৃতিসৌধ
[সম্পাদনা]তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমের দ্বীপ শহর পেই কারুম্বুতে DRDO দ্বারা কালামের স্মরণে ডাঃ এ.পি.জে. আব্দুল কালাম জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে। এটি জুলাই ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উদ্বোধন করেছিলেন। প্রদর্শনীতে রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতিলিপি রয়েছে যেগুলো নিয়ে কালাম কাজ করেছিলেন। গণনেতার শত শত প্রতিকৃতির সাথে তার জীবন সম্পর্কে এক্রাইলিক পেইন্টিংগুলিও প্রদর্শিত হয়। প্রবেশপথে কালামের একটি মূর্তি রয়েছে যাতে তাকে বীণা বাজাতে দেখা যাচ্ছে। বসা এবং দাঁড়ানো ভঙ্গিতে নেতার আরও দুটি ছোট মূর্তি রয়েছে।
বই, তথ্যচিত্র এবং জনপ্রিয় সংস্কৃতি
[সম্পাদনা]- কালামের লেখা
- এপিজে আব্দুল কালাম এবং রোদ্দাম নরসিমহা দ্বারা তরল মেকানিক্স এবং স্পেস টেকনোলজির উন্নয়ন; ইন্ডিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সেস, ১৯৮৮[৩২]
- ভারত ২০২০: এপিজে আব্দুল কালাম, ওয়াই এস রাজন দ্বারা নতুন সহস্রাব্দের জন্য একটি দৃষ্টিভঙ্গি; নিউ ইয়র্ক, ১৯৯৮।[৩৩]
- উইংস অফ ফায়ার: এপিজে আবদুল কালাম, অরুণ তিওয়ারির একটি আত্মজীবনী; ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৯৯।[৩৪]
- ইগনিটেড মাইন্ডস: এপিজে আব্দুল কালামের দ্বারা ভারতের মধ্যে শক্তি উন্মোচন করা; ভাইকিং, ২০০২।[৩৫]
- এপিজে আব্দুল কালাম দ্বারা আলোকিত স্পার্কস; পুণ্য পাবলিশিং প্রাইভেট লিমিটেড দ্বারা ২০০৪ সালে প্রকাশিত।[৩৬]
- এপিজে আবদুল কালামের মিশন ইন্ডিয়া, মানব গুপ্তের আঁকা ছবি; পেঙ্গুইন বই, ২০০৫[৩৭]
- এপিজে আব্দুল কালামের অনুপ্রেরণামূলক চিন্তা; রাজপাল অ্যান্ড সন্স, ২০০৭[৩৮]
- এপিজে আব্দুল কালামের অদম্য আত্মা; রাজপাল অ্যান্ড সন্স পাবলিশিং[৩৯]
- এ সিভাথানু পিল্লাইয়ের সাথে এপিজে আব্দুল কালামের দ্বারা একটি ক্ষমতাপ্রাপ্ত জাতির কল্পনা করা; টাটা ম্যাকগ্রা-হিল, নয়াদিল্লি[৪০]
- ইউ আর বর্ন টু ব্লসম: টেক মাই জার্নি বিয়ন্ড বাই এপিজে আবদুল কালাম এবং অরুণ তিওয়ারি; ওশান বুকস, ২০১১।[৪১]
- টার্নিং পয়েন্টস: এপিজে আব্দুল কালামের চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে একটি যাত্রা; হার্পার কলিন্স ইন্ডিয়া, ২০১২।[৪২]
- এপিজে আব্দুল কালাম এবং সৃজন পাল সিং দ্বারা লক্ষ্য ৩ বিলিয়ন; ডিসেম্বর ২০১১ | প্রকাশক পেঙ্গুইন বই।
- মাই জার্নি: এপিজে আবদুল কালামের দ্বারা স্বপ্নে রূপান্তর; রূপা পাবলিকেশন দ্বারা ২০১৪ সালে প্রকাশিত।[৪৩]
- পরিবর্তনের জন্য একটি ইশতেহার: এপিজে আব্দুল কালাম এবং ভি পোনরাজের ভারত ২০২০ এর সিক্যুয়েল; হার্পার কলিন্স দ্বারা জুলাই ২০১৪।[৪৪]
- আপনার ভবিষ্যত তৈরি করুন: এপিজে আবদুল কালামের দ্বারা স্পষ্ট, স্পষ্ট, অনুপ্রেরণামূলক; রাজপাল অ্যান্ড সন্স দ্বারা, ২৯ অক্টোবর ২০১৪।[৪৫]
- পুনরুজ্জীবিত: এপিজে আব্দুল কালাম এবং সৃজন পাল সিং দ্বারা একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের বৈজ্ঞানিক পথ; পেঙ্গুইন ভারত দ্বারা, ১৪ মে ২০১৫ সালে প্রকাশিত।[৪৬]
- অরুণ তিওয়ারির সঙ্গে এপিজে আবদুল কালামের প্রমুখ স্বামীজির সঙ্গে আমার আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা; হার্পারকলিন্স পাবলিশার্স, জুন ২০১৫ সালে প্রকাশ করে।[৪৭]
- অ্যাডভান্টেজ ইন্ডিয়া: এপিজে আবদুল কালাম এবং সৃজন পাল সিং দ্বারা চ্যালেঞ্জ থেকে সুযোগ; হার্পারকলিন্স পাবলিশার্স, ১৫ অক্টোবর ২০১৫।[৪৮]
- জীবনী
- ইটারনাল কোয়েস্ট: এস চন্দ্রের লাইফ অ্যান্ড টাইমস অফ ডাঃ কালাম; পেন্টাগন পাবলিশার্স, ২০০২।[৪৯]
- আর কে প্রুথি দ্বারা রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম; আনমোল পাবলিকেশন্স, ২০০২।[৫০]
- এপিজে আবদুল কালাম: কে ভূষণ, জি কাত্যালের দ্য ভিশনারি অফ ইন্ডিয়া; এপিএইচ পাব কর্প, ২০০২।[৫১]
- A Little Dream (documentary film) by P. Dhanapal; Minveli Media Works Private Limited, ২০০৮.[৫২]
- দ্য কালাম ইফেক্ট: মাই ইয়ার্স উইথ দ্য প্রেসিডেন্ট; হার্পার কলিন্স, ২০০৮।[৫৩]
- মহাত্মা আব্দুল কালামের সাথে আমার দিনগুলি, ফর এ কে জর্জ দ্বারা; নভেল কর্পোরেশন, ২০০৯।[৫৪]
- এপিজে আবদুল কালাম: অরুণ তিওয়ারির একটি জীবন; হ্যাপার কলিন্স, ২০১৫।[৫৫]
- দ্য পিপলস প্রেসিডেন্ট: এস এম খানের ডাঃ এপিজে আব্দুল কালাম; ব্লুমসবারি পাবলিশিং, ২০১৬।[৫৬]
- জনপ্রিয় সংস্কৃতি
২০১১ সালের হিন্দি ফিল্ম আই অ্যাম কালাম -এ, কালামকে ছোটু নামে একটি দরিদ্র কিন্তু উজ্জ্বল রাজস্থানী ছেলের উপর ইতিবাচক প্রভাব হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে, যে তার মূর্তির সম্মানে নিজের নাম কালাম রাখে।[৫৭]মাই হিরো কালাম হল শিবু হিরেমাথের ২০১৮ সালের ভারতীয় কন্নড় ভাষার জীবনীমূলক চলচ্চিত্র যা শৈশব থেকে পোখরান পরীক্ষা পর্যন্ত তার জীবন চিত্রিত করে।[৫৮]
পিপলস প্রেসিডেন্ট হল পঙ্কজ ব্যাস পরিচালিত একটি ২০১৬ সালের ভারতীয় ডকুমেন্টারিফিচার ফিল্ম যা কালামের জীবনকে কভার করে।এটি ভারত সরকারের চলচ্চিত্র বিভাগ দ্বারা প্রযোজনা করা হয়েছিল।[৫৯]
মেগা আইকনস (২০১৮-২০২০), ভারতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি টেলিভিশন সিরিজ যা ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক -এ সম্প্রচারিত হয়েছিল, তৃতীয় পর্ব - "এপিজে আব্দুল কালাম" - কালামের জীবন এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে তার আরোহণের উপর ভিত্তি করে।[৬০]
২০২০ সালের ভারতীয় বিমান চালনা শিল্প নিয়ে নির্মিত সুরারাই পোত্রু ছবিতে কালাম, শেখ মেইদিনের মতোই তাকে চিত্রিত করেছেন।[৬১]
একজন বিজ্ঞানী হিসাবে ক্যারিয়ার
[সম্পাদনা]১৯৬০ সালে মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে স্নাতক হওয়ার পর, কালাম প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার (ভারত সরকার দ্বারা পরিচালিত,প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো) অ্যারোনটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এস্টাবলিশমেন্টে যোগ দেন এবং ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস (ডিআরডিএস) এর সদস্য হওয়ার পর বিজ্ঞানী হিসেবে যোগ দেন। তিনি একটি ছোট হোভারক্রাফ্ট ডিজাইন করে তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন, কিন্তু ডিআরডিও-তে চাকরির বিষয়ে তার পছন্দের বিষয়ে অস্বস্তি ছিল।[৬৩] কালাম বিখ্যাত মহাকাশ বিজ্ঞানী বিক্রম সারাভাইয়ের অধীনে কাজ করা মহাকাশ গবেষণার জন্য ভারতীয় জাতীয় কমিটিরও অংশ ছিলেন।[৬৪] ১৯৬৯ সালে, কালামকে ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনে (ইসরো) স্থানান্তর করা হয়েছিল যেখানে তিনি ভারতের প্রথম স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল ( SLV -III) এর প্রকল্প পরিচালক ছিলেন যা ১৯৮০ সালের জুলাই মাসে <i id="mwkA">রোহিণী</i> স্যাটেলাইটকে পৃথিবীর কাছাকাছি কক্ষপথে সফলভাবে স্থাপন করেছিল; কালাম প্রথম ১৯৬৫ সালে ডিআরডিও-তে স্বাধীনভাবে একটি সম্প্রসারণযোগ্য রকেট প্রকল্পে কাজ শুরু করেছিলেন।[৬৫] ১৯৬৯ সালে, কালাম সরকারের অনুমোদন লাভ করেন এবং আরও প্রকৌশলীকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রোগ্রামটি প্রসারিত করেন।
১৯৬৩ থেকে ১৯৬৪ সালে, তিনি পরিদর্শন করেন ভার্জিনিয়ার হ্যাম্পটনেনাসার ল্যাংলি গবেষণা কেন্দ্র; মেরিল্যান্ডের গ্রিনবেল্টে গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টার; এবং ওয়ালপস ফ্লাইট সুবিধা।[৩৪][৬৬] ১৯৭০ এবং ১৯৯০ এর দশকের মধ্যে, কালাম পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল (পিএসএলভি) এবং এসএলভি-III প্রকল্পগুলি বিকাশের জন্য একটি প্রচেষ্টা করেছিলেন, উভয়ই সফল প্রমাণিত হয়েছিল।
কালামকে টার্মিনাল ব্যালিস্টিক রিসার্চ ল্যাবরেটরি- এর প্রতিনিধি হিসেবে দেশের প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা স্মাইলিং বুদ্ধ দেখার জন্য রাজা রামান্না আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, যদিও তিনি এর উন্নয়নে অংশ নেননি।১৯৭০-এর দশকে, কালাম দুটি প্রকল্প, প্রজেক্ট ডেভিল এবং প্রজেক্ট ভ্যালিয়েন্টও পরিচালনা করেছিলেন, যা সফল এসএলভি প্রোগ্রামের প্রযুক্তি থেকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করতে চেয়েছিল।[৬৭] কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অসম্মতি সত্ত্বেও, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কালামের পরিচালকের অধীনে তার বিবেচনার ক্ষমতার মাধ্যমে এই মহাকাশ প্রকল্পগুলির জন্য গোপন তহবিল বরাদ্দ করেছিলেন।[৬৭] কালাম কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাকে এই শ্রেণীবদ্ধ মহাকাশ প্রকল্পগুলির প্রকৃত প্রকৃতি গোপন করতে রাজি করাতে একটি অবিচ্ছেদ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন।[৬৭] তার গবেষণা এবং শিক্ষাগত নেতৃত্ব ১৯৮০-এর দশকে তাঁকে দারুণ খ্যাতি ও মর্যাদা এনে দেয়, যা সরকারকে তার পরিচালনায় একটি উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি শুরু করতে প্ররোচিত করে।[৬৭] কালাম এবং ডক্টর ভিএস অরুণাচলম, ধাতুবিদ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা, তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আর. ভেঙ্কটরামনের পরামর্শে কাজ করেছিলেন একের পর এক পরিকল্পিত ক্ষেপণাস্ত্র গ্রহণের পরিবর্তে একযোগে ক্ষেপণাস্ত্রের কম্পন তৈরির প্রস্তাবে।[৬৮] ইন্টিগ্রেটেড গাইডেড মিসাইল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (IGMDP) নামে মিশনের জন্য ₹ বিলিয়ন বরাদ্দের জন্য মন্ত্রিসভা অনুমোদন পাওয়ার ক্ষেত্রে আর ভেঙ্কটরামন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং কালামকে প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন।[৬৮]অগ্নি, একটি মধ্যবর্তী রেঞ্জের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং পৃথ্বী, কৌশলগত সারফেস-টু-সার্ফেস মিসাইল সহ মিশনের অধীনে অনেকগুলি ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে কালাম একটি প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন, যদিও প্রকল্পগুলি অব্যবস্থাপনা এবং ব্যয় এবং সময় বাড়ার জন্য সমালোচিত হয়েছে।[৬৮][৬৯]
কালাম জুলাই ১৯৯২ থেকে ডিসেম্বর ১৯৯৯ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা এবং প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।এই সময়ের মধ্যে পোখরান-২ পারমাণবিক পরীক্ষা পরিচালিত হয়েছিল যেখানে তিনি একটি নিবিড় রাজনৈতিক ও প্রযুক্তিগত ভূমিকা পালন করেছিলেন।কালাম পরীক্ষার পর্বে রাজাগোপাল চিদাম্বরমের সাথে প্রধান প্রকল্প সমন্বয়কারী হিসাবে কাজ করেছিলেন।[৩৪][৭০] এই সময়ের মধ্যে কালামের মিডিয়া কভারেজ তাকে দেশের সেরা পরিচিত পরমাণু বিজ্ঞানী করে তোলে।[৭১] যাইহোক, সাইট টেস্টের ডিরেক্টর কে সানথানাম বলেছেন যে থার্মোনিউক্লিয়ার বোমাটি একটি " ফাজল " ছিল এবং একটি ভুল রিপোর্ট জারি করার জন্য তিনি কালামের সমালোচনা করেছিলেন।[৭২] কালাম এবং চিদাম্বরম উভয়েই দাবি খারিজ করেছেন।[৭৩]
১৯৯৮ সালে, কার্ডিওলজিস্ট সোমা রাজুর সাথে, কালাম একটি কম দামের করোনারি স্টেন্ট তৈরি করেন, যার নাম "কালাম-রাজু স্টেন্ট"।[৭৪][৭৫] ২০১২ সালে, এই জুটি গ্রামীণ এলাকায় স্বাস্থ্যসেবার জন্য একটি শ্রমসাধ্য ট্যাবলেট কম্পিউটার ডিজাইন করেছিল, যার নামকরণ করা হয়েছিল "কালাম-রাজু ট্যাবলেট"।[৭৬]
রাষ্ট্রপতিত্ব
[সম্পাদনা]কালাম কে আর নারায়ণনের স্থলাভিষিক্ত হয়ে ভারতের ১১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।তিনি ২০০২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ৯২২,৮৮৪ ইলেক্টোরাল ভোটে জয়ী হয়ে লক্ষ্মী সহগালের ১০৭,৩৬৬ ভোটকে ছাড়িয়ে যান।তার মেয়াদ ২৫ জুলাই ২০০২ থেকে ২৫ জুলাই ২০০৭ পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল।[৭৭]
১০ জুন ২০০২-এ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) যেটি সেই সময়ে ক্ষমতায় ছিল, তারা কালামকে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য মনোনীত করবে বলে প্রকাশ করেছিল,[৭৮][৭৯] এবং সমাজবাদী পার্টি এবং জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি উভয়ই তার প্রার্থীতা সমর্থন করেছিল।[৮০][৮১] সমাজবাদী পার্টি কালামের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করার পর, নারায়ণন ক্ষেত্রটি পরিষ্কার রেখে অফিসে দ্বিতীয় মেয়াদে না চাওয়া বেছে নেন।[৮২] কালাম তার প্রার্থিতা ঘোষণা সম্পর্কে বলেছেন:
আমি সত্যিই অভিভূত. ইন্টারনেট এবং অন্যান্য মিডিয়া উভয় ক্ষেত্রেই, আমাকে একটি বার্তার জন্য বলা হয়েছে। এই মুহূর্তে দেশের মানুষকে কী বার্তা দিতে পারি, ভাবছিলাম।[৮৩]
১৮ জুন, কালাম বাজপেয়ী এবং তার সিনিয়র মন্ত্রিসভার সহকর্মীদের সাথে ভারতীয় সংসদে তার মনোনয়নপত্র জমা দেন।[৮৪]
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণ ১৫ জুলাই ২০০২ তারিখে সংসদ এবং রাজ্যের অ্যাসেম্বলিতে শুরু হয়, মিডিয়া দাবি করে যে নির্বাচনটি ছিল একতরফা ব্যাপার এবং কালামের বিজয় একটি পূর্বনির্ধারিত উপসংহার; জুলাই মাসের ১৮ তারিখ গণনা অনুষ্ঠিত হয়।[৮৫] কালাম একটি সহজ বিজয়ের মাধ্যমে ভারত প্রজাতন্ত্রের ১১ তম রাষ্ট্রপতি হন,[৮৬] এবং ২৫ জুলাই শপথ নেওয়ার পর রাষ্ট্রপতি ভবনে চলে যান।[৮৭] কালাম ছিলেন ভারতের তৃতীয় রাষ্ট্রপতি যাকে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ভারতরত্ন দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছিল, রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান (১৯৫৪) এবং জাকির হুসেন (১৯৬৩) ছিলেন ভারতরত্ন প্রাপক যারা পরে ভারতের রাষ্ট্রপতি হন।[৮৮] তিনিই প্রথম বিজ্ঞানী এবং রাষ্ট্রপতি ভবন দখলকারী প্রথম ব্যাচেলর।[৮৯]
রাষ্ট্রপতি হিসাবে তার মেয়াদকালে, তিনি স্নেহের সাথে জনগণের রাষ্ট্রপতি হিসাবে পরিচিত ছিলেন,[৯০][৯১][৯২] বলেছিলেন যে অফিস অফ প্রফিট বিলে স্বাক্ষর করা ছিল তার মেয়াদের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত।[৯৩][৯৪][৯৫] কালাম তার মেয়াদকালে তার কাছে জমা দেওয়া ২১টি করুণার আবেদনের মধ্যে ২০টির ভাগ্য নির্ধারণে তার নিষ্ক্রিয়তার জন্য সমালোচিত হয়েছিল।[৯৬] ভারতের সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদ ভারতের রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমা মঞ্জুর করার এবং মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আসামিদের মৃত্যুদণ্ড স্থগিত বা কমানোর ক্ষমতা দেয়।[৯৬][৯৭] কালাম রাষ্ট্রপতি হিসাবে তার পাঁচ বছরের মেয়াদে শুধুমাত্র একটি ক্ষমার আবেদনে কাজ করেছিলেন, ধর্ষক ধনঞ্জয় চ্যাটার্জির আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, যাকে পরে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল।[৯৬] সম্ভবত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আবেদনটি ছিল আফজাল গুরুর কাছ থেকে, একজন কাশ্মীরি সন্ত্রাসী যিনি ২০০১ সালের ডিসেম্বরে ভারতীয় সংসদে হামলার ষড়যন্ত্রের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন এবং ২০০৪ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছিলেন।[৯৭] যদিও ২০ অক্টোবর ২০০৬-এ সাজা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল, তার করুণার আবেদনের বিচারাধীন পদক্ষেপের ফলে তাকে মৃত্যুদণ্ডে বহাল রাখা হয়েছিল।[৯৭][৯৮] ২০০৫ সালে বিহারে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার বিতর্কিত সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন।
২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে,চণ্ডীগড়ের মেডিকেল শিক্ষা ও গবেষণা পোস্ট গ্রাজুয়েট ইনস্টিটিউটের একটি ইন্টারেক্টিভ সেশনে, কালাম দেশের জনসংখ্যার কথা মাথায় রেখে ভারতে অভিন্ন সিভিল কোডের প্রয়োজনীয়তাকে সমর্থন করেছিলেন।[৯৯][১০০][১০১][১০২]
তার মেয়াদের শেষে, ২০ জুন ২০০৭-এ, কালাম দ্বিতীয় মেয়াদে অফিসে থাকার কথা বিবেচনা করার জন্য তার ইচ্ছুকতা প্রকাশ করেন যদি ২০০৭ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তার বিজয় সম্পর্কে নিশ্চিত থাকে।[১০৩] যাইহোক, দুই দিন পরে, তিনি আবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে তিনি রাষ্ট্রপতি ভবনকে কোনো রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে জড়িত এড়াতে চান।[১০৪] নতুন করে ম্যান্ডেট পাওয়ার জন্য তার কাছে বাম দল, শিবসেনা এবং ইউপিএ-এর সাংবিধানিক সমর্থন ছিল না।[১০৫][১০৬]
২৪ জুলাই ২০১২-এ ১২ তম রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিলের মেয়াদ শেষ হওয়ার কাছাকাছি, এপ্রিল মাসে মিডিয়া রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল যে কালাম তার দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য মনোনীত হতে পারেন।[১০৭][১০৮][১০৯] প্রতিবেদনের পরে, সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইটগুলি তার প্রার্থিতা সমর্থনকারী অনেক লোককে সাক্ষী করেছে।[১১০][১১১] বিজেপি সম্ভাব্যভাবে তার মনোনয়নকে সমর্থন করেছিল, এই বলে যে তৃণমূল কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস তাকে ২০১২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য প্রস্তাব করলে দল তাদের সমর্থন দেবে।[১১২][১১৩] নির্বাচনের এক মাস আগে, মুলায়ম সিং যাদব এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কালামের প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়েছেন।[১১৪] কয়েকদিন পর, মুলায়ম সিং যাদব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একাকী সমর্থক হিসাবে রেখে পিছপা হন।[১১৫] ১৮ জুন ২০১২-এ, কালাম ২০১২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অস্বীকার করেন।তিনি তা না করার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বলেছিলেন:
অনেকে, অনেক নাগরিকও একই ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এটা শুধুমাত্র আমার প্রতি তাদের ভালোবাসা ও স্নেহ এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে। আমি সত্যিই এই সমর্থন দ্বারা অভিভূত. এটি তাদের ইচ্ছা, আমি এটিকে সম্মান করি। তারা আমার প্রতি যে আস্থা রেখেছেন তার জন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই।[১১৬]
রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পরবর্তী কর্মকাণ্ড
[সম্পাদনা]অফিস ছাড়ার পর, কালাম ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট শিলং, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট আহমেদাবাদ এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট ইন্দোরে ভিজিটিং প্রফেসর হন; ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স, ব্যাঙ্গালোরের একজন সাম্মানিক ফেলো;[১১৭]ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ স্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি তিরুবনন্তপুরমেরচ্যান্সেলর; আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং এর অধ্যাপক; এবং ভারত জুড়ে অন্যান্য অনেক একাডেমিক এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানে একজন সহায়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করেন।তিনি হায়দরাবাদের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনোলজিতে তথ্য প্রযুক্তি এবং বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রযুক্তি শিক্ষা দেন।[১১৮]
২০১১ সালে, কালাম কুডনকুলাম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিষয়ে তার অবস্থানের জন্য নাগরিক দলগুলির দ্বারা সমালোচিত হন; তিনি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার সমর্থন করেছিলেন এবং স্থানীয় জনগণের সাথে কথা না বলার জন্য অভিযুক্ত হন।[১১৯] প্রতিবাদকারীরা তার সফরের প্রতি বিদ্বেষী ছিল কারণ তারা তাকে একজন পরমাণু-পন্থী বিজ্ঞানী হিসেবে দেখেছিল এবং প্ল্যান্টের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যের বিষয়ে তিনি যে আশ্বাস দিয়েছেন তাতে তারা মুগ্ধ হয়নি।[১২০]
২০১৩ সালের মে মাসে, কালাম ভারতের যুবকদের জন্য দুর্নীতিকে পরাজিত করার একটি কেন্দ্রীয় থিম সহ হোয়াট ক্যান আই গিভ মুভমেন্ট নামে একটি প্রোগ্রাম চালু করেছিলেন।[১২১][১২২]
ব্যক্তিগত জীবন
[সম্পাদনা]কালাম পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলেন, তার আগে বড় ছিলেন একজন বোন, আসিম জোহরা (মৃত্যু:১৯৯৭), তার পরে তিনজন বড় ভাই: মোহাম্মদ মুথু মীরা লেব্বাই মারাইকায়ার (৫ নভেম্বর ১৯১৬ - ৭ মার্চ ২০২১),[১২৩][১২৪] মুস্তফা কালাম (মৃত্যু :১৯৯৯ ) এবং কাসিম মোহাম্মদ (মৃত্যু: ১৯৯৫ )।[১২৫] তিনি সারা জীবন তার বড় ভাইবোন এবং তাদের বর্ধিত পরিবারের সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং নিয়মিতভাবে তার পুরোনো সম্পর্কের জন্য অল্প পরিমাণ অর্থ পাঠাতেন, নিজে আজীবন ব্যাচেলর ছিলেন।[১২৫][১২৬]
কালাম তার সততা এবং তার সরল জীবনযাপনের জন্য বিখ্যাত ছিলেন।[১২৬][১২৭] তিনি কখনই একটি টেলিভিশনের মালিক ছিলেন না, এবং তার সকাল ৬:৩০ বা ৭ টার মধ্যে ঘুম থেকে উঠার এবং রাত্র ২ টার মধ্যে ঘুমানোর অভ্যাস ছিল[১২৮] তার কিছু ব্যক্তিগত সম্পদের মধ্যে তার বই, তার বীণা, কিছু পোশাক, একটি সিডি প্লেয়ার এবং একটি ল্যাপটপ অন্তর্ভুক্ত ছিল; তার মৃত্যুতে, তিনি কোন ইচ্ছা রেখে যাননি, এবং তার সম্পত্তি তার বড় ভাইয়ের কাছে চলে যায়, যিনি তাকে লালন-পালন করেছিলেন।[১২৯][১৩০]
ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি
[সম্পাদনা]কালামের সারাজীবনে ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।[১৩১] তিনি তার নিজের আধ্যাত্মিক যাত্রাকে তার সর্বশেষ বই নামকরণ করেছেন, ট্রান্সসেন্ডেন্স: মাই স্পিরিচুয়াল এক্সপেরিয়েন্স উইথ প্রমুখ স্বামীজির।[১৩২][১৩৩]
ইসলাম
[সম্পাদনা]একজন গর্বিত এবং অনুশীলনকারী মুসলমান, রমজানে দৈনিক নামাজ এবং রোজা কালামের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল।[১৩৪][১৩৫][১৩৬] তার পিতা, তার নিজের শহর রামেশ্বরমের একটি মসজিদেরইমাম, কঠোরভাবে তার সন্তানদের মধ্যে এই ইসলামিক রীতিনীতিগুলি স্থাপন করেছিলেন।[১৩৪] তার বাবাও তরুণ কালামকে আন্তঃধর্মীয় সম্মান এবং সংলাপের মূল্য বুঝিয়েছিলেন।কালাম যেমন স্মরণ করেছেন: "প্রতি সন্ধ্যায়, আমার বাবা এ.পি. জয়নুলাবদিন, একজন ইমাম, পাকশি লক্ষ্মণ শাস্ত্রী, রামানাথস্বামী হিন্দু মন্দিরের প্রধান পুরোহিত এবং একজন গির্জার পুরোহিত গরম চা নিয়ে বসতেন এবং দ্বীপ সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতেন।"[১৩২][১৩৭] এই ধরনের প্রাথমিক প্রকাশ কালামকে নিশ্চিত করেছিল যে ভারতের বহুবিধ সমস্যার উত্তর দেশের ধর্মীয়, সামাজিক এবং রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে "সংলাপ এবং সহযোগিতা" এর মধ্যে রয়েছে।[১৩৫] অধিকন্তু, যেহেতু কালাম বিশ্বাস করতেন যে "অন্যান্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা" ইসলামের মূল ভিত্তিগুলির মধ্যে একটি, তাই তিনি বলতে পছন্দ করতেন: "মহাপুরুষদের জন্য, ধর্ম হল বন্ধুত্ব করার একটি উপায়; ছোট লোকেরা ধর্মকে যুদ্ধের হাতিয়ার করে তোলে।"[১৩৮]
সমন্বয়বাদ
[সম্পাদনা]ভারতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে কালামের ব্যাপক জনপ্রিয়তার একটি উপাদান, এবং তার উত্তরাধিকারের একটি স্থায়ী দিক হল, ভারতের অনেক আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিভিন্ন উপাদানের প্রশংসা করার জন্য তিনি যে সমন্বয়বাদকে নির্বাচিত করেছেন।[১৩৫][১৩৬][১৩৯][১৪০]কোরান এবং ইসলামিক অনুশীলনে তার বিশ্বাস ছাড়াও, কালাম হিন্দু ঐতিহ্যে সুপণ্ডিত ছিলেন; তিনি সংস্কৃত শিখেছিলেন,[১৪১][১৪২]ভগবদ্গীতা পড়েছিলেন[১৪৩][১৪৪] এবং তিনি একজন নিরামিষাশী ছিলেন।[১৪৫] কালাম তামিল কবিতা লেখা, বীণা (একটি ভারতীয় স্ট্রিং যন্ত্র[১৪৬] বাজানো এবং প্রতিদিন কর্ণাটিক ভক্তিমূলক সঙ্গীতও উপভোগ করতেন।[১৩৬] ২০০২ সালে, রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর পার্লামেন্টে তার একটি প্রাথমিক বক্তৃতায়, তিনি আরও অখন্ড ভারতের জন্য তার আকাঙ্ক্ষা পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন, এই বলে যে "গত এক বছরে আমি সমস্ত ধর্মের অনেক আধ্যাত্মিক নেতার সাথে দেখা করেছি … এবং আমি চাই আমাদের দেশের বিভিন্ন ঐতিহ্যের মধ্যে মনের ঐক্য আনয়নের জন্য কাজ করার চেষ্টা করা।"[১৩৯] কালামকে বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্যের একত্রীকরণকারী হিসাবে বর্ণনা করে, কংগ্রেস নেতা শশী থারুর বলেছিলেন, "কালাম ছিলেন একজন সম্পূর্ণ ভারতীয়, ভারতের বৈচিত্র্যের ঐতিহ্যের সারগ্রাহীতার মূর্ত প্রতীক"।[১৩৬]বিজেপি নেতা এল কে আডবানি সম্মত হয়েছেন যে কালাম ছিলেন "ভারতের ধারণার সর্বোত্তম উদাহরণ, যিনি সমস্ত সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের মধ্যে সর্বোত্তম মূর্ত হয়েছিলেন যা বিপুল বৈচিত্র্যের মধ্যে ভারতের ঐক্যকে নির্দেশ করে।এটি তার প্রকাশিত দ্বিতীয় থেকে শেষ বইটিতে সবচেয়ে আকর্ষণীয়ভাবে স্পষ্ট ছিল, যার শিরোনাম ছিল ট্রান্সসেন্ডেন্স: মাই স্পিরিচুয়াল এক্সপেরিয়েন্স উইথ প্রমুখ স্বামী "।[১৪০]
গুরুরূপে প্রমুখ স্বামী
[সম্পাদনা]আরও সমৃদ্ধ, আধ্যাত্মিক, এবং একীভূত ভারত তৈরিতে সাহায্য করার জন্য কালামের আধ্যাত্মিক নেতাদের সাথে দেখা করার আকাঙ্ক্ষাই প্রাথমিকভাবে তাকে বোচাসনবাসি শ্রী অক্ষর পুরুষোত্তম স্বামীনারায়ণ সম্প্রদায়ের হিন্দু গুরু প্রমুখ স্বামীর সাথে দেখা করতে পরিচালিত করেছিল, যাকে কালাম তার চূড়ান্ত আধ্যাত্মিক শিক্ষক এবং গুরু হিসাবে বিবেচনা করতেন।[১৩২][১৩৫] কালাম এবং প্রমুখ স্বামীর মধ্যে চৌদ্দ বছরের মেয়াদে আটটি সাক্ষাতের মধ্যে প্রথমটি ৩০ জুন ২০০১, নতুন দিল্লিতে হয়েছিল, যে সময়ে কালাম অবিলম্বে প্রমুখ স্বামীর সরলতা এবং আধ্যাত্মিক বিশুদ্ধতার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন বলে বর্ণনা করেছিলেন।[১৪৭] কালাম বলেছেন যে তিনি তাদের অসংখ্য মিথস্ক্রিয়া জুড়ে প্রমুখ স্বামীর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।বোচাসনবাসি শ্রী অক্ষর পুরুষোত্তম অক্ষরধাম, গান্ধীনগর কমপ্লেক্সে ২০০২ সালের সেপ্টেম্বরে সন্ত্রাসী হামলার পরদিন এরকম একটি ঘটনা ঘটেছিল; প্রমুখ স্বামী সন্ত্রাসীদের সহ সকল মৃত ব্যক্তির স্থানের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন এবং পবিত্র জল ছিটিয়েছিলেন, এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করে যে সমস্ত মানব জীবন পবিত্র।কালাম প্রমুখ স্বামীর সহানুভূতি এবং সমবেদনা দ্বারা অনুপ্রাণিত হওয়ার কথা স্মরণ করেন, এই ঘটনাটিকে ট্রান্সসেন্ডেন্স: মাই স্পিরিচুয়াল এক্সপেরিয়েন্স উইথ প্রমুখ স্বামীজি লেখার জন্য তার প্রেরণার একটি হিসাবে উল্লেখ করেছেন।[১৪৮] তার উপর প্রমুখ স্বামীর প্রভাবের সংক্ষিপ্তসারে কালাম বলেছিলেন যে "[প্রমুখ স্বামী] সত্যিই আমাকে রূপান্তরিত করেছেন।তিনি আমার জীবনে আধ্যাত্মিক আরোহনের চূড়ান্ত পর্যায়ে আছেন।..প্রমুখ স্বামীজি আমাকে ঈশ্বর-সমলয় কক্ষপথে রেখেছেন।আর কোনো কৌশলের প্রয়োজন নেই, কারণ আমি অনন্তকাল ধরে আমার চূড়ান্ত অবস্থানে আছি।"[১৩৫][১৪৯] কালামের মৃত্যুর এক মাস পরে তার চূড়ান্ত বই প্রকাশের পর, সহ-লেখক অরুণ তিওয়ারি এই অনুচ্ছেদটিকে সম্ভাব্য ভবিষ্যদ্বাণীমূলক এবং কালামের মৃত্যুর পূর্বাভাস হিসেবে উল্লেখ করেছেন।[১৫০]
লেখাগুলো
[সম্পাদনা]কালাম তার ভারত ২০২০ বইতে, ২০২০ সালের মধ্যে ভারতকে একটি "জ্ঞানের পরাশক্তি" এবং একটি উন্নত জাতি হিসাবে গড়ে তোলার জন্য একটি কর্ম পরিকল্পনার জোরালো পরামর্শ দিয়েছেন।তিনি ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচীর উপর তার কাজকে ভবিষ্যতের পরাশক্তি হিসেবে ভারতের স্থান নিশ্চিত করার একটি উপায় হিসেবে বিবেচনা করেন।[১৫১]
আমি পাঁচটি ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছি যেখানে সমন্বিত পদক্ষেপের জন্য ভারতের মূল যোগ্যতা রয়েছে: (১) কৃষি এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ; (২) শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা; (৩) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি; (৪) দেশের সকল অংশের জন্য অবকাঠামো, নির্ভরযোগ্য এবং মানসম্পন্ন বৈদ্যুতিক শক্তি, ভূপৃষ্ঠের পরিবহন এবং অবকাঠামো; এবং (৫) সমালোচনামূলক প্রযুক্তিতে স্বনির্ভরতা। এই পাঁচটি ক্ষেত্র ঘনিষ্ঠভাবে আন্তঃসম্পর্কিত এবং সমন্বিতভাবে অগ্রসর হলে খাদ্য, অর্থনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তার দিকে নিয়ে যাবে।
কালাম তার জীবনের একটি "পরিবর্তনমূলক মুহূর্ত" বর্ণনা করেছেন যখন তিনি বিএপিএস স্বামীনারায়ণ সম্প্রদায়ের গুরু প্রমুখ স্বামীকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ভারত কীভাবে উন্নয়নের এই পঞ্চমুখী দৃষ্টিভঙ্গি উপলব্ধি করতে পারে।প্রমুখ স্বামীর উত্তর- অপরাধ ও দুর্নীতির বর্তমান জলবায়ু কাটিয়ে উঠতে ঈশ্বর এবং আধ্যাত্মিকতার প্রতি বিশ্বাস বিকাশের ষষ্ঠ ক্ষেত্র যোগ করা- পরবর্তী ১৫ বছরের কালামের জীবনের আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি হয়ে ওঠে, যা তিনি তার চূড়ান্ত বই, ট্রান্সসেন্ডেন্স: মাই স্পিরিচুয়াল এক্সপেরিয়েন্সে বর্ণনা করেছেন। প্রমুখ স্বামীজির সঙ্গে বৈঠকের পর এবং তার মৃত্যুর মাত্র এক মাস আগে প্রকাশিত।[১৪৭]
জানা গেছে যে দক্ষিণ কোরিয়ায় তার রচিত বইগুলির অনূদিত সংস্করণের যথেষ্ট চাহিদা ছিল।[১৫২]
কালাম বায়োমেডিকাল ইমপ্লান্টের উন্নয়নের জন্য একটি গবেষণা প্রোগ্রাম সহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অন্যান্য উন্নয়নে সক্রিয় আগ্রহ নিয়েছিলেন।তিনি মালিকানাধীন সফ্টওয়্যারের উপর ওপেন সোর্স প্রযুক্তিকে সমর্থন করেছিলেন, ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে বৃহত্তর আকারে বিনামূল্যের সফ্টওয়্যার ব্যবহার তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা আরও বেশি লোকের কাছে নিয়ে আসবে।[১৫৩]
কালাম ১৯৯৯ সালে বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করার পর দুই বছরে ১০০,০০০ শিক্ষার্থীর সাথে যোগাযোগের লক্ষ্য নির্ধারণ[১২]।তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন, "আমি তরুণদের, বিশেষ করে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।এখন থেকে, আমি তাদের সাথে অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চাই, তাদের কল্পনাকে প্রজ্বলিত করতে এবং তাদেরকে একটি উন্নত ভারতের জন্য কাজ করার জন্য প্রস্তুত করতে সাহায্য করব যার জন্য রাস্তার মানচিত্র ইতোমধ্যেই উপলব্ধ রয়েছে।"তার স্বপ্ন প্রতিটি ছাত্রকে তাদের হৃদয়ের সুপ্ত আগুন ব্যবহার করে বিজয়ের আকাশে আলোকিত করতে দেওয়া।[১৫৪]
পুরস্কার এবং সম্মান
[সম্পাদনা]মূল নিবন্ধ: List of honors and awards received by Simple. P. J. Abdul Kalam
কালাম ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৭টি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী পেয়েছেন।[১৫৫][১৫৬] ভারত সরকার তাকে ১৯৮১ সালে পদ্মভূষণ এবং ১৯৯০ সালে (আইএসআরও) এবং (ডিআরডিও) এর সাথে কাজ করার জন্য এবং সরকারের একজন বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা হিসেবে তার ভূমিকার জন্য পদ্মবিভূষণে ভূষিত করে।[১৫৭] ১৯৯৭ সালে, ভারতে বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির আধুনিকীকরণে অবদানের জন্য কালাম ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান, ভারতরত্ন লাভ করেন।[১৫৮] ২০১৩ সালে, তিনি ন্যাশনাল স্পেস সোসাইটি থেকে "একটি মহাকাশ-সম্পর্কিত প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা এবং নেতৃত্বে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য" ভন ব্রাউন পুরস্কার পান।[১৫৯]
২০১২ সালে, কালাম আউটলুক ইন্ডিয়ারসর্বশ্রেষ্ঠ ভারতীয়ের জরিপে ২ নম্বর স্থানে ছিলেন।[১৬০]
তার মৃত্যুর পর, কালাম অসংখ্য শ্রদ্ধা পেয়েছিলেন।তামিলনাড়ু রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে যে তার জন্মদিন, ১৫ অক্টোবর, রাজ্য জুড়ে "যুব রেনেসাঁ দিবস" হিসাবে পালন করা হবে; রাজ্য সরকার আরও প্রতিষ্ঠা করেছে " ড. এ.পি.জে. আব্দুল কালাম পুরস্কার ", যেখানে পুরস্কারপ্রাপ্ত কে একটি ৮-গ্রাম স্বর্ণপদক, একটি প্রশংসাপত্র এবং ₹ ৫,০০,০০০ (ইউএস$ ৬,১১১.৬৫) প্রদান করা হয়।২০১৫ সালে শুরু হওয়া, বৈজ্ঞানিক বৃদ্ধি, মানবিক বা শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কৃতিত্বের সাথে রাজ্যের বাসিন্দাদের স্বাধীনতা দিবসে প্রতি বছর এই পুরস্কার দেওয়া হবে।[১৬১]
২০১৫ সালে কালামের জন্মবার্ষিকীতে সিবিএসই সিবিএসই এক্সপ্রেশন সিরিজে তার নামের উপর বিষয়গুলি সেট করে।[১৬২]
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১৫ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে, কালামের ৮৪তম জন্মবার্ষিকীতে নয়াদিল্লির ডিআরডিও ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে কালামের স্মরণে ডাকটিকিট প্রকাশ করেন।
নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির ( জেপিএল ) গবেষকরা ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (আইএসএস) এর ফিল্টারে একটি নতুন ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার করেছেন এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ডঃ এ.পি.জে আব্দুল কালামের নামে Solibacillus kalamii নামকরণ করেন।[১৬৩]
কালামের মৃত্যুর পর তার সম্মানে বেশ কিছু শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য স্থানের পুনঃনামকরণ বা নামকরণ করা হয়।
- কেরালা টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি, তিরুবনন্তপুরমে সদর দফতর যেখানে কালাম বছরের পর বছর বসবাস করতেন, তার মৃত্যুর পর তার নাম পরিবর্তন করে এপিজে আব্দুল কালাম টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি রাখা হয়।
- কালামের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দিনে বিহার রাজ্য সরকার কর্তৃক বিহারের কিশানগঞ্জে একটি কৃষি কলেজের নাম পরিবর্তন করে "ড. কালাম কৃষি কলেজ, কিশানগঞ্জ" রাখা হয়।রাজ্য সরকারও ঘোষণা করেছে যে এটি কালামের নামে একটি প্রস্তাবিত বিজ্ঞান শহরের নামকরণ করবে।[১৬৪]
- ভারতের প্রথম মেডিকেল টেক ইনস্টিটিউটের নামকরণ করা হয়েছে কালাম ইনস্টিটিউট অফ হেলথ টেকনোলজি যা বিশাখাপত্তনমে অবস্থিত।[১৬৫]
- উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সরকার কর্তৃক উত্তরপ্রদেশ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি (ইউপিটিইউ) এর নাম পরিবর্তন করে এ.পি.জে আব্দুল কালাম টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি রাখা হয়।[১৬৬]
- এ.পি.জে. আব্দুল কালাম মেমোরিয়াল ট্রাভাঙ্কোর ইনস্টিটিউট অফ ডাইজেস্টিভ ডিজিজেস, কেরালারকোল্লাম শহরের একটি নতুন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্রাভাঙ্কোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাথে সংযুক্ত।[১৬৭]
- কেরালার মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নতুন একাডেমিক কমপ্লেক্স।[১৬৮]
- ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাটনায় ডক্টর এপিজে আব্দুল কালাম সায়েন্স সিটির নির্মাণ শুরু হয়।[১৬৯]
- পুদুচেরির লসপেটে একটি নতুন বিজ্ঞান কেন্দ্র এবং প্ল্যানেটোরিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয়।[১৭০]
- ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ফুলব্রাইট-কালাম জলবায়ু ফেলোশিপ চালু করেছে।ফেলোশিপের জন্য আবেদনকারীদের প্রথম কল ঘোষণা করা হয়েছিল, ১২ মার্চ ২০১৬, যা ৬ জন ভারতীয় পিএইচডি ছাত্র এবং পোস্ট-ডক্টরাল গবেষককে ৬-১২ মাসের জন্য মার্কিন হোস্ট প্রতিষ্ঠানগুলির সাথে কাজ করতে সক্ষম করবে।ফেলোশিপটি ফুলব্রাইট প্রোগ্রামের অধীনে দ্বিজাতিক ইউএস-ইন্ডিয়া এডুকেশনাল ফাউন্ডেশন (ইউএসআইইএফ) দ্বারা পরিচালিত হবে।[১৭১]
- উড়িষ্যারসম্বলপুরের বুর্লাতে ডঃ এপিজে আব্দুল কালাম প্ল্যানেটোরিয়ামের নামকরণ করা হয়েছিল তার নামে।
দ্বীপ
[সম্পাদনা]ওড়িশার একটি জাতীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার স্থান হুইলার দ্বীপ, সেপ্টেম্বর ২০১৫ সালে দ্বীপের নাম পরিবর্তন করে আব্দুল কালাম দ্বীপ রাখা হয়েছিল।[১৭২]
রাস্তা
[সম্পাদনা]আগস্ট ২০১৫ সালে নয়াদিল্লির একটি বিশিষ্ট রাস্তার নাম পরিবর্তন করে আওরঙ্গজেব রোড থেকে ডাঃ এপিজে আব্দুল কালাম রোড করা হয়[১৭৩][১৭৪][১৭৫]
বৃক্ষ প্রজাতি
[সম্পাদনা]ফেব্রুয়ারি ২০১৮-এ, বোটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার বিজ্ঞানীরা তার সম্মানে ড্রাইপেটস কালামি নামে একটি নতুন উদ্ভিদ প্রজাতির নামকরণ করেছিলেন।[১৭৬]